চলতি শিক্ষাবর্ষের দেড় মাস ইতোমধ্যে পার হয়েছে। কিন্তু জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) হিসাবেই এখনো ২৬ লাখ বই পাঠানো সম্ভব হয়নি। যদিও মুদ্রাকররা বলছেন, অন্তত ১ কোটি বই সরবরাহ হয়নি। সরবরাহ না হওয়া বইয়ের সবই মাধ্যমিক স্তরের। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির। বইগুলো আটকে আছে ৭-৮টি প্রতিষ্ঠানের কাছে।

শিক্ষক ও অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই দিতে না পারায় পাঠদানে বিঘ্ন ঘটছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন একশ্রেণির অসৎ ব্যবসায়ী। ঢাকার বাংলাবাজারে পোস্ট অফিসের সামনে, নীলক্ষেত, ভিকারুননিসা-আইডিয়ালসহ রাজধানীর বিভিন্ন বড় স্কুলের আশপাশে বইয়ের দোকানে বিক্রি হচ্ছে বিনামূল্যের পাঠ্যবই। ঢাকার বাইরে থেকেও এসব বই বিক্রির খবর পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে বিতর্কের মুখে ১০ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বই বাতিল করা হয়েছে। এ কারণে অন্তত সাড়ে ৪৩ কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। একই বিষয়ের আরও দুটি বই সংশোধনের কাজ চলছে। যদি অল্প সংশোধনী আসে, তাহলে কেবল ‘ডিউ পার্ট’ পাঠালেই চলবে। আর আমূল পরিবর্তনের সুপারিশ এলে বই দুটি পুনরায় মুদ্রণ করতে হবে।

এসব বিবেচনায় নিয়ে আরও ৫ থেকে ২৩ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। গচ্চা যাওয়ার হিসাব এখানেই শেষ নয়। উল্লিখিত বইগুলো লেখার জন্য লেখকদের সম্মানিসহ অন্যান্য খরচ আছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একাধিক দফায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

সবমিলে বই বাতিলে গচ্চা অন্তত ৩৫০ কোটি টাকা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু যার বা যাদের কারণে কঠিন অর্থনৈতিক সমস্যার এই সময়ে এমন গচ্চা গেছে, তারা এনসিটিবিতে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, যে পরিমাণ বই সরবরাহ বাকি আছে, এর সংখ্যা খুবই নগণ্য। কিছুতেই তা ২৬ লাখ বা ১ কোটি হওয়ার কথা নয়। বাতিল হওয়া বইয়ের পেছনে কত টাকা খরচ হয়েছে, সেই হিসাব এখনো করা হয়নি। তবে বই বাতিলে কেবল মুদ্রণ খরচ নয়, লেখক সম্মানি এবং প্রশিক্ষণ ব্যয় যোগ করা যেতেই পারে।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, যে ২৬ লাখ বই এখনো আটকে আছে, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে বর্ণশোভার কাছে-১০ লাখ। এই প্রতিষ্ঠানটি বইয়ের কাজ নিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা নিতে পারেনি। ফলে তারা মুদ্রণকাজ শুরু করতে পারেনি। কিন্তু আগেভাগে এনসিটিবি এদিকে নজর দেয়নি।